চোল রাজবংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখো। Mojo Education bengali

 চোল রাজবংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস লেখো। Mojo Education bengali

■ উত্তর। চোল রাজবংশের উত্থান সুদুর দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে অতি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেবল রাজনৈতিক সংহতি নয়, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রেও চোলরাজাদের অবদান বিশেষ উল্লেখযোগ্য।


আনুমানিক দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে কাৰিকল পেন্নার ও ভেলার নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে ঢোল শাসনের সূচনা করেন। কিন্তু চের, পাণ্ড্য ও পল্লবদের ক্রমাগত আক্রমণে এক শতকের মধ্যেই চোল রাজ্য' ধ্বংস হয়ে যায়। নবম খিস্টাব্দে পল্লব বংশের পতন শুরু হলে বিজয়ালয়-এর নেতৃত্বে চোল বংশের পুনরভ্যুত্থান ঘটে (৮৫০ খ্রিঃ)। তবে দক্ষিণ ভারতে চোল বংশের প্রকৃত আধিপত্য শুরু হয় প্রথম পরান্তকের রাজত্বকালে (৯০৭-৯৪৬ খ্রিঃ)। তিনি উত্তরে নেলোর পর্যন্ত চোল রাজ্য বিস্তার করেন। তবে পরবর্তী দুর্বল উত্তরাধিকারীদের আমলে ঢোল-শক্তি হীনবল হয়ে পড়ে। আবার দশম খ্রিস্টাব্দের শেষভাগে প্রথম রাজরাজ-এর নেতৃত্বে চোল বংশ পুনরায় শক্তিশালী হয়ে উঠে।


• প্রথম রাজরাজ (৯৮৫-১০১৩ খ্রিঃ): প্রথম রাজরাজ ছিলেন চোল বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। তাঁর 'তাঞ্জোর লেখ' থেকে রাজরাজের সামরিক অভিযানের সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।


সর্বপ্রথম রাজরাজ ত্রিবান্দ্রামের নিকট চেরদের পরাজিত করেন। এরপর পান্ড্যদের পরাজিত করে তিনি 'মাদুরা' দখল করেন। চালুক্যদের পরাজিত করে 'বেঙ্গী'ও তিনি নিজ সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। তাঁর অন্যতম কীর্তি ছিল শক্তিশালী চোল নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠা। এর সাহায্যে তিনি সিংহলের রাজধানী স্থাপন করেন। সিংহলে প্রাপ্ত শিলালেখ থেকে অনুমান করা হয়, তিনি প্রাচীন 'দ্বাদশ সহস্র দ্বীপপুঞ্জে' নৌ-অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। বর্তমানে ঐতিহাসিকরা 'দ্বাদশ সহস্র দ্বীপপুঞ্জ' বলতে বর্তমানে মালদ্বীপ ও লাক্ষাদ্বীপ অঞ্চলকে নির্দিষ্ট করেছেন।


শিল্পস্থাপত্য ও সাহিত্যের প্রতিও তাঁর গভীর অনুরাগ ছিল। শৈবধর্মাবলম্বী হলেও অন্যান্য ধর্মের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাবান ছিলেন। তাঞ্জোরের সুবিখ্যাত 'রাজরাজেশ্বর মন্দির' তাঁরই কীর্তি।


• প্রথম রাজেন্দ্র চোল (১০১৪-'৪৪ খ্রিঃ): প্রথম রাজরাজের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র প্রথম রাজেন্দ্র সিংহাসনে বসেন। তিনি ছিলেন চোলবংশের সর্বশ্রেষ্ঠ নৃপতি। কন্যাকুমারী, মহেন্দ্রগিরি প্রমুখ অঞ্চলে প্রাপ্ত লেখসমূহ থেকে তাঁর সামরিক কীর্তির কথা জানা যায়।


সিংহাসনে বসেই তিনি পিতার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে অগ্রসর হন এবং একাধিক সামরিক সাফল্যের দ্বারা চোল-শক্তিকে অপ্রতিহত করে তোলেন।


• রাজ্যবিস্তার: প্রথম রাজেন্দ্র পাণ্ডা ও চের (কেরল) রাজ্য দুটিকে পরাজিত করে চোল সাম্রাজ্যভুক্ত করেন এবং ওই রাজ্য দুটিতে নিজপুত্রকে শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। সিংহলের বিস্তীর্ণ অন্যলও তিনি নিজের সাম্রাজ্যভুক্ত করেন। চালুক্যদের পরাজিত করে তিনি হায়দরাবাদে ঢোল-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। দক্ষিণ ভারত বিজয় সম্পূর্ণ করে প্রথম রাজেন্দ্র উত্তর ভারত বিজয়ে অগ্রসর হন। তিনি কলিঙ্গ রাজ্যের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে ক্ষেত্রে অক্ষিণবঙ্গের রণশর প্রথম রাজেন্দ্রর নিকট পরাজিত হন। বঙ্গবিজয়ের পর তিনি বাংলাদেশ আক্রমণ করেন। পূর্ববঙ্গের শাসক গোবিন্দচন্দ্র, পশ্চিমবঙ্গের মহীপাল এবং এতে ১৯ পরেই তিনি কাবেরী নদীর তীরে নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। এর নাম হয় 'গঙ্গাইকোণ্ড 'বলাইকোও চোল' অর্থাৎ 'গঙ্গাবিজেতা চোল' এই উপাধি গ্রহণ করেন। এর অব্যবহিত চোলপরম।' শয়নে


তোমার শক্তিশালী শৈলেন্দ্র সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নৌ-অভিযান। শৈলেন্দ্র সাম্রাজ্য 'শ্রীবিজয়' নামেও • নৌ-অভিযান: প্রথম রাজেন্দ্রর সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব হল পূর্ব এশিয়ার ৬ খ্রিঃ পরিচিত ছিল। শৈলেন্দ্র-রাজা বিজয় তৃঙ্গবর্মন রাজেন্দ্রর নিকট পরাজিত হয়ে বশ্যতা স্বীকার করেন। এর ফলে শৈলেন্দ্র রাজ্যের মধ্য দিয়ে ভারতের পণ্যবাহী জাহাজ চিনদেশে যাতায়াত করতে পারে। ১০৪৪ খ্রিস্টাব্দে চালুক্যদের সাথে এক যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় প্রথম রাজেন্দ্র মৃত্যুমুখে পতিত হন।


• পরবর্তী রাজাগণ: প্রথম রাজেন্দ্রর মৃত্যুর পর চোল সাম্রাজ্যের ক্রমাবনতি শুরু হয়েছিল। তাঁর পুত্র প্রথম রাজাধিরাজ (১০৪৪-৫২ খ্রিঃ) চালুক্য ও পাণ্ড্য রাজ্যের বিরুদ্ধে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। সিংহলের বিরুদ্ধেও তিনি অভিযান প্রেরণ করেন। রাজাধিরাজের পরবর্তী উল্লেখযোগ্য নৃপতি ছিলেন বীর রাজেন্দ্র (১০৪৬-'০৭ খ্রিঃ)। তিনি চালুক্যদের বিরুদ্ধে জয়ের স্মৃতিস্বরূপ তুঙ্গভদ্রার তীরে একটি বিজয়স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন। চোল-নৃপতি কুলোতুঙ্গের রাজত্বকালে (১০৭০-১১২০ খ্রিঃ) চোল-চালুক্য অনুমান সংঘর্ষ কিছুটা কমেছিল। কারণ তাঁর মহিষী ছিলেন চালুক্য রাজকন্যা। অবশ্য পরবর্তী শাসকদের আমলে চোল-চালুক্য সংঘর্ষ আবার বৃদ্ধি পেয়েছিল। এতদসত্ত্বেও দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত চোল-শক্তি টিকেছিল। ইতিমধ্যে যাদব ও কাকতীয় বংশ দক্ষিণ ভারতে প্রবল ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিল। তাদের আক্রমণে শেষ পর্যন্ত চোল শাসনের অবসান ঘটে


Post a Comment

Previous Post Next Post