হরপ্পা-সভ্যতার অধিবাসীদের অর্থনৈতিক জীবনের পরিচয় দাও।
উত্তর। হরপ্পার অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল থাকলেও পাশাপাশি শিল্প, শুপালন ব্যাবসাবাণিজ্য প্রভৃতিও অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করত। স্যার মাটিমার হুইলার-এর মতে, শহরের জীবনযাত্রায় ধনতান্ত্রিক সভ্যতার প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়।
এই সময় কাঠের লাঙল দ্বারা কৃষিজমি কর্ষণ করা হত এবং কৃষিক্ষেত্রে জলসেচের যাবস্থা ছিল। গম, যব, মুগ, মশুর, সরষে, তিল, ধান ইত্যাদির চাষ হত বলে মনে করা এর হয়। পশুপালন ছিল হরপ্পার অধিবাসীদের অপর উল্লেখযোগ্য জীবিকা। গোরু, ভেড়া, কে দূরে এসবের মাংস তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করত। আর উট বলদ, গাধা এসব পশু দিয়ে বাতে মালবহনের কাজ করাত। সিধু অঞ্চলে লোহার কোনো চিহ্ন পাওয়া না-গেলেও তামা ও ব্রাঞ্চের বর্শা, কুঠার, বঁড়শি, করাত, ছুঁচ ইত্যাদির নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধাতুশিল্পে সোনা ও রূপার অলংকার প্রচলিত ছিল।
মৃৎশিল্পীরা পলিমাটি, বালি ও চুনের গুঁড়ো মিশিয়ে কলশি, জ্বালা, থালা, পেয়ালা ভিকান প্রভৃতি দ্রব্য তৈরি করত। পোড়ামাটির পাত্রগুলির ওপর তারা ময়ূর, মাছ, ফুলের পাপড়ি -মা বিভিন্ন পাখির রঙিন ছবি আঁকত। সিন্ধু-সভ্যতা থেকে রপ্তানি হত বার্লি, ময়দা, তেল,
পশমজাত দ্রব্য এবং আমদানি করা হত সোনা, রূপা, দামি পাথর, হাতির দাঁতের তৈরি লাগে চিবুনি, পাখির মূর্তি প্রভৃতি। জলপথে জাহাজে আর স্থলপথে ঠেলাগাড়ির সাহায্যে এত ব্যাবসাবাণিজ্য চলত। ওই সময় মুদ্রাব্যবস্থা প্রচলিত হয়নি, তাই বিনিময়ের মাধ্যমে ওরে কেনাবেচা চলত।
মেসোপটেমিয়ার সাথে হরপ্পা-সভ্যতার যে সুদৃঢ় বাণিজ্যিক যোগাযোগ ছিল, তা বোঝা হয়ে যায় উভয় অঞ্চলে প্রাপ্ত পারস্পরিক নিদর্শনসমূহ থেকে। সাহিত্যিক ও প্রত্নতাত্ত্বিক-এই দুই প্রকার উপাদানই বাণিজ্যিক যোগাযোগের সাক্ষ্য বহন করে। মেসোপটেমিয়ার মানুষদের নলে যায়, জাহাজ ইত্যাদি প্রয়োজন ছিল। এগুলি পাবার জন্যই তারা সিন্ধু অঞ্চলের সাথে বন্দ যেগাযোগ গড়ে তুলেছিল। সুতরাং উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ অবশ্যই
প্রান্তে সিন্ধুবাসীদের সামুদ্রিক তৎপরতার বহু প্রমাণ পাওয়া যায়। ধ্বংসাবশেষ থেকে ঝিনুকের বলে সংগ্রহ করা হত। অধ্যাপক ম্যাকির মতে, সমুদ্রপথেই সিন্ধুদেশের সাথে সুমের, মিশর, কপার তৈরি হাতা, চামচ, মুস্তাখচিত অলংকার প্রভৃতি পাওয়া গেছে। এগুলি গভীর সমুদ্র থেকে কোনো ইলম প্রভৃতি দেশের যোগাযোগ হত। লোথালে আবিষ্কৃত পোতাশ্রয়ের ধ্বংসাবশেষ